ওষুধের ব্যবহার/ অপব্যবহার

ফার্মাসিস্টরা যখন ফার্মেসীতে কাজ করেন তখন তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যেকোনো প্রেসক্রিপশন বা ব্যবস্থাপত্র সরাসরি ফার্মেসীতে আসে ওষুধ ক্রয়ের জন্য। যে সকল ফার্মাসিস্টরা ওষুধের দোকানে কাজ করেন, তাদের সামাজিক দায়িত্ব অনেক। ওষুধের দোকানে ফার্মাসিস্টকে সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকতে হয়। 

রোগী বা রোগীর কোন আত্মীয় ওষুধ কিনতে দোকানে এলে প্রথমে সাক্ষাত দেন ফার্মাসিস্ট। সাধারণত (রোগীর) ব্যবস্থাপত্র অনুসারে ফার্মাসিস্ট প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং পথ্য সর্ম্পকে রোগীকে ধারণা দিয়ে থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশে ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ কেনা বা বিক্রির প্রবণতা নিয়মিত ব্যাপার। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া প্রতিদিন শত শত এন্টিবায়োটিক যেমন সেফরাডিন, সেফিক্সিম, সেফুরক্সিম, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, লিভোফ্লক্সাসিন ইত্যাদি ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। এন্টিবায়োটিক বিক্রয়ের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র থাকা বাঞ্ছনীয়। অর্থাৎ ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অতএব কোন ফার্মাসিস্ট যদি রোগী চাহিবামাত্র অথবা রোগী কোন রোগের উপসর্গের কথা বলামাত্র এন্টিবায়োটিক দিয়ে দেন, তাহলে এটি শুধু ওষুধের অপব্যবহারই নয় বরং এটি একটি মারাত্মক অপরাধ। ফার্মাসিস্টের এই অপরাধের ফলে এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার কি মারাত্মক ক্ষতি করছে তার অনেক উদাহরণ রয়েছে। সাধারণত চিকিৎসকেরা কোন ব্যবস্থাপত্রে এন্টিবায়োটিক লিখেন যখন কোন রোগীর শরীরে ইনফেকশন বা জীবাণু সংক্রমণ হয় । এছাড়াও ইনফেকশনের ধরনের উপর নির্ভর করে কোন্ এন্টিবায়োটিক খেতে হবে, দিনে কয় বার, কি পরিমাণ, কতদিন ধরে খেতে হবে, খাওয়ার আগে বা পরে খেতে হবে কিনা ইত্যাদি অনেক জটিল বিষয় জড়িত রয়েছে। ধরা যাক, একজন ফার্মাসিস্ট জানেন সাধারণ সর্দি-কাশি হলেও তা ইনফেকশন জনিত নাও হতে পারে। তাই সাধারণ সর্দি-কাশি নিয়ে রহিম ফার্মেসীতে আসা মাত্র ফার্মাসিস্ট রোহিত তাকে ক্লক্সাসিলিন দিয়ে বললো দিনে ২ বার এভাবে তিন দিন খেতে হবে। এখানে রোহিত যে মারাত্মক ভুলগুলো করলো তা নিম্নরূপঃ

(১) প্রথমত, সাধারণ সর্দি-কাশিতে কোন এন্টিবায়োটিক লাগে না;

(২) অপ্রয়োজনীয়ভাবে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করার জন্য পরামর্শ দিয়ে ফার্মাসিস্ট তার শপথ ভঙ্গ এবং রোগীকে অতিরিক্ত আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন করলো;

(৩) রোগীকে ডাক্তারের কাছে যাওয়া থেকে বিরত করে রোগীকে সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করলো,

(৪) ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক ডিসপেন্সিং/বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, তাই শপথভঙ্গের অপরাধে অপরাধী হলো ফার্মাসিস্ট রোহিত। এ ধরনের বেআইনী কার্যকলাপ থেকে যেকোন ফার্মাসিস্টের বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়;

(৫) আইন ভঙ্গের অপরাধে ফার্মাসিস্ট রোহিত এখন অপরাধী। ফার্মেসী কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ যে সব অপরাধের জন্য রোহিতকে আইনের আওতায় সোপর্দ করতে পারে সেগুলো হলোঃ (ক) ভুল ওষুধ নির্ধারণ, (খ) আর্থিক ক্ষতি, (গ) রোগ নির্ণয়ে ভুল, (ঘ) পেশাগত অপরাধ, (ঙ) ওষুধের অপব্যবহার এবং (চ) ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স তৈরি করা:

(৬) যেহেতু এক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিকের দরকার নেই, কিন্তু রোহিতের পরামর্শে রহিম ক্লক্সাসিলিন ব্যবহার করতে বাধ্য - এটাকেই বলে ওষুধের অপব্যবহার;

(৭) রহিমকে ব্যবস্থাপত্র দেয়ার সময় ব্রুক্সাসিলিনের পরিমাণ (Dose), দিনে কয় বার (Frequency), কত ঘন্টা পর পর এবং কতদিন পর্যন্ত খেতে হবে - এর কোনটি সঠিকভাবে বলতে না পারায় রহিমের রোগ সারার পরিবর্তে রোগের বিস্তৃতি ঘটতে বাধ্য- অর্থাৎ ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স হবে বা ওষুধটি কার্যকারিতা হারাবে এবং ভবিষ্যতে ক্লক্সাসিলিন আর রহিমের শরীরে কাজ করবে না।

রোহিতের মতো অনেক ফার্মাসিস্টের কারণেই আমাদের দেশে অনেক জীবনরক্ষাকারী এন্টিবায়োটিক যেমন সালফা ড্রাগস, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ইত্যাদি কাজ করে না। এর ফলে আমাদের জীবন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অনেক এন্টিবায়োটিক আজ জীবাণুদের সাধারণ খাবারে পরিণত হয়েছে - আর আমরা মরে যাচ্ছি বিভিন্ন ইনফেকশনে শুধুমাত্র এন্টিবায়োটিক অপব্যবহার করার কারণে।

একটু সচেতন হলে রোহিতের ভুলগুলো খুব সহজেই পরিহার করা যায় যেমন, রহিম দোকানে এসে ওষুধ চাওয়ার পর ফার্মাসিস্ট রোহিত তাকে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে সঠিক ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিত এবং তা ফার্মাসিস্টের যথার্থ দায়িত্ব পালন বলে বিবেচিত হতো। রহিম যদি আঙ্গুল কাটা নিয়ে আসতো তাহলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা যেমন-কাটা স্থানে ড্রেসিং করিয়ে হাসপাতালে পাঠাতে পারত। এর বাইরে অন্য যেকোন কাজ যেমন কোন ওষুধ খেতে বলাই হচ্ছে ওষুধের অপব্যবহার।

ওষুধ হচ্ছে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক যৌগ (Chemical Compound) যা মানুষ / প্রাণীর অসুস্থ অবস্থায় একটি সুনির্দিষ্ট মাত্রা বা পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। শুধু তাই নয়, দিনে কয়বার ব্যবহার করতে হবে এবং কতদিন ব্যবহার করা যাবে তাও উল্লেখ করা থাকে। যেমন প্যারাসিটামল ট্যাবলেটে ৫০০ মি.গ্রা. প্যারাসিটামল থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক কারও জ্বর বা মাথাব্যথা হলে একটি করে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট দিনে তিন থেকে চার বারের বেশি ব্যবহার করা যাবে না।

Comments

Popular posts from this blog

ওষুধ ব্যবহারের আগে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা)-jicA

জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (UNDP)