ওষুধ কি? (What is medicine?)
অসুখ হলে আমরা ডাক্তারের কাছে যাই। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কিছু ওষুধের নাম লিখে দেন। আমরা সেই সব ওষুধ খেয়ে সুস্থ হয়ে উঠি। তাই সাধারণভাবে বলা যায় যে, যা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা রোগমুক্ত হই তাই ওষুধ। ওষুধটি কেমন হবে তা নির্ভর করে আমরা কোন ধরনের ডাক্তারের কাছে যাই তার ওপর। এ্যালোপ্যাথি ডাক্তার সাধারণত ট্যাবলেট, ক্যাপসুল বা সিরাপ খেতে দেন। অন্যদিকে হোমিওপ্যাথি ডাক্তার দেন সাদা মিষ্টি পাউডারের পুরিয়া, ছোট ছোট সাদা দানার মত বাড় বা কোন তরল যা ড্রপারে করে এক বা দুই ফোঁটা খেতে হয়। আবার কবিরাজ দেন বিদঘুটে স্বাদের লতাপাতার মিশ্রন। যে ধরনের ডাক্তারের কাছেই আমরা যাই না কেন, প্রত্যেকেই কিছুনা কিছু ওষুধ দেন আরোগ্য লাভের জন্য। সুতরাং বলা যায় যে, ওষুধের উদ্দেশ্য একটাই- রোগমুক্তি ।
চিকিৎসাশাস্ত্র ওষুধের সংজ্ঞা দেয় আরেকটু ব্যাপকভাবে। এই মতে, সুস্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণ, রোগ প্রতিরোধ এবং অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য আমরা যা যা করি তার সবই ওষুধের অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণস্বরূপ একজন ডায়াবেটিস রোগীর কথা ধরা যাক। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য তিনি মুখে ওষুধ খান, সকাল বিকাল ১ ঘন্টা করে হাঁটেন, চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলেন, প্রতিবেলায় পরিমাণমত খাবার খান ইত্যাদি। আমরা জানি ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা কখনই সম্পূর্ণ ভাল হয় না, এই রোগটিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় মাত্র। অর্থাৎ সুস্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এই রোগীকে অবশ্যই অনেকগুলো কাজ করতে হবে বা বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। শুধুমাত্র মুখে ওষুধ খাওয়াই যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত হাঁটা, ব্যায়াম, খাদ্যাভাস সবগুলোরই সরাসরি ভূমিকা রয়েছে ।
ওষুধের ইংরেজি পরিভাষা হিসেবে ড্রাগ (Drug) অথবা মেডিসিন (Medicine) দুটোকেই সাধারণত ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী যে বস্তু গ্রহণের পর শরীরে প্রতিক্রিয়া তৈরিতে সক্ষম তাকে ড্রাগ বলে। যেমন সিগারেট বা তামাকের নিকোটিন, চা-কফির ক্যাফেইন প্রভৃতি। সাধারণত ড্রাগ ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। ড্রাগ রোগমুক্তি, রোগ প্রতিরোধ, রোগ সনাক্তকরণ এমনকি নেশাদ্রব্য হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে যে সব ড্রাগ শুধুমাত্র রোগমুক্তি ও রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয় তাদেরকে মেডিসিন বলে। যেমন এ্যান্টিবায়োটিক। একজন দক্ষ ওষুধবিজ্ঞানী তার জ্ঞান ও কর্মদক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ড্রাগকে ওষুধে পরিণত করেন।
ড্রাগ সাধারণত দুটি উৎস হতে প্রাপ্ত-
১. প্রাকৃতিক উৎস : বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ, প্রাণীদেহ এবং খনিজ হতে প্রাপ্ত ।
২. কৃত্রিম উৎস : ল্যাবরেটরিতে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়।
ড্রাগকে বিশুদ্ধ রূপে আহরণ করে তার সাথে বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে তৈরি হয় মেডিসিন। আমরা ওষুধের দোকানে যে বিভিন্ন রকম ওষুধ সাজানো অবস্থায় দেখি প্রকৃতপক্ষে তাই মেডিসিন।
Comments
Post a Comment