Posts

Showing posts from May, 2023

বিশ্ব ব্যাংক (THE WORLD BANK)

Image
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সংস্থাগুলির মধ্যে বিশ্ব ব্যাংক অন্যতম। বিশ্ব ব্যাংক দরিদ্র দেশগুলিকে সুবিধাজনক শর্তে স্বাস্থ্যশিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক উন্নয়নের জন্য ঋণ প্রদান করে যা প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি থেকে পাওয়া দুষ্কর।  বর্তমানে স্বাস্থ্য বিষয়ক ও মানব সম্পদ উন্নয়ন খাতে ব্যাংকটির প্রদত্ত ঋণ বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত মোট ঋণের ২৫ শতাংশ এবং আগামীতে এই ঋণের পরিমাণ ৫০ শতাংশে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রকল্প পরিচালনা করে। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যাগুলির মধ্যে বিশ্বব্যাংক মূলত এইডস্ নিয়ে বেশি মনোযোগী। বিভিন্ন এন.জি.ও এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় বিশ্ব ব্যাংক এইডস্ সম্পর্কিত নানাবিধ জনসচেতনামূলক প্রকল্প পরিচালনা করে থাকে।

ইউনিসেফ (unicef)

Image
ইউনিসেফ মূলত শিশুদের নিয়ে কাজ করে। ইউনিসেফের বাজেটের বৃহদাংশ ব্যবহার করা হয় স্বাস্থ্য বিষয়ক খাতে। এই সংস্থা শিশুদের স্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় বলে অত্যন্ত দরিদ্র দেশগুলির অনুর্ধ ৫ বছর এর শিশু যাদের স্বাস্থ্য সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ তাদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় এর সম্পদের সিংহভাগ খরচ করে থাকে।  ইউনিসেফ-এর বাজেটের শতকরা ৭০ ভাগ আসে বিভিন্ন সরকারের দান হতে এবং বাকি ৩০ ভাগ আসে ব্যক্তি পর্যায়ের দাতাদের দান থেকে। এছাড়া ইউনিসেফ বিশ্বব্যাংক এর সাথে একত্রে বেশকিছু প্রকল্প পরিচালনা করে। ইউনিসেফ বাংলাদেশে নানাবিধ প্রকল্প পরিচালনা করে থাকে যার মধ্যে রয়েছে মীনা কার্টুন, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যতত্ত্ব বিষয়ক কর্মশালা, শিশুশ্রম বিষয়ক কর্মশালা, শহরের বস্তিগুলিতে স্বাস্থ্যের মান উন্নয়ন ইত্যাদি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization)

Image
এটি জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা। একে বলা হয় জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক আন্তঃসরকার সংস্থা। এর সংবিধান মোতাবেক এই সংস্থাটির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে 'সর্বোচ্চ সম্ভব পর্যায়ে জনসাধারণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। এর প্রধান কাজ হচ্ছে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মসূচিগুলোর সঠিক নির্দেশনা দেওয়া ও এগুলোর সঠিক সমন্বয় সাধন করা।  এই সংস্থাটির কার্যাবলীর মধ্যে আরো আছে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থাকে স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য প্রদান করা, স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা কাজকে উৎসাহিত করা, বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিকে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা ইত্যাদি। এই সংস্থা বিভিন্ন উন্নত দেশের সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা এমনকি ব্যক্তি পর্যায়ের দাতাদের কাছ থেকেও আর্থিক সাহায্য গ্রহণ করে এবং তাদের বাজেট অনুযায়ী বিভিন্ন উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মসূচিতে অর্থ সাহায্য প্রদান করে । এইডস্ ও অন্যান্য যৌনবাহিত রোগ প্রতিরোধ বিষয়ক প্রকল্পের জন্য এর বিশেষ ও আলাদা বাজেট রয়েছে। বাংলাদেশে সংস্থাটি যেসব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতামূলক কার্য পরিচালনা করে তার মধ্যে রয়েছে গোদ রোগ, কালাজ্বর, কুষ

মাল্টিল্যাটেরাল এজেন্সি বা বহুমাত্রিক সংস্থা (Multilateral agencies or multilateral organizations)

Image
যেসব এজেন্সির অর্থ সাহায্য বিভিন্ন দেশের সরকার ও অন্যান্য উৎস হতে প্রাপ্ত তাকে মাল্টিল্যাটেরাল এজেন্সি বা বহুমাত্রিক সংস্থা বলা হয়। এই ধরনের অধিকাংশ সংস্থার উৎপত্তি জাতিসংঘ হতে। বাংলাদেশে যেসব বহুমাত্রিক সংস্থা স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত কার্যক্রম পরিচালনা করছে তারা হলো ঃ > বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন (সংক্ষেপে WHO ); > জাতিসংঘের শিশু তহবিল বা ইউনিসেফ। > বিশ্ব ব্যাংক বা ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, > জাতিসংঘের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ তহবিল বা ইউএনএফপিএ। > জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি বা ইউএনডিপি।

স্বাস্থ্য সেবায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা (Domestic and international organizations in health care)

Image
উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলির স্বাস্থ্য বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ (যেমন উন্নয়নশীল দেশের জন্য প্রায় ৫ শতাংশ অনুন্নত দেশের জন্য প্রায় ২০ শতাংশ) আসে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলির কাছ থেকে।  বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেবামূলক সংস্থা এবং দেশীয় এন.জি.ও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সমস্যার/ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এসব সংস্থাকে নিম্নোক্ত তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় : ১) মাল্টিল্যাটেরাল এজেন্সি বা বহুমাত্রিক সংস্থা ২) বাইল্যাটেরাল এজেন্সি বা দ্বিপাক্ষিক সংস্থা ৩) এনজিও

ওষুধের সঠিক ব্যবহারে ফার্মাসিস্টের দায়িত্ব ও কর্তব্য

Image
(১) প্রথমে প্রেসক্রিপশনটি নির্ভুলভাবে পড়তে ও বুঝতে হবে: (২) ওষুধের নাম, ওষুধের ধরন (Dosage Form), ওষুধের মাত্রা (Dose), কতবার খেতে হবে (Doses Frequency) এবং কতদিন (Course) তা পড়ে দেখতে হবে; (৩) প্রেসক্রিপশনে কোন পথ্য নির্দেশনা আছে কিনা তা পড়ে দেখতে হবে; (৪) কোন এন্টিবায়োটিকের নাম লেখা আছে কিনা দেখতে হবে; (৫) কোন জটিল রোগ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি রোগের ওষুধের নাম আছে কিনা দেখতে হবে; (৬) কোন ধরনের রোগী যেমন শিশু, কিশোর, প্রাপ্তবয়স্ক, বয়োজ্যেষ্ঠ ইত্যাদি বিবেচনা করতে হবে।

ওষুধের সঠিক ব্যবহার

Image
কোন ব্যক্তি অসুস্থতা বোধ করা মাত্র ডাক্তারের পরামর্শ বা প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কোন ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ ক্রয় ও নির্দিষ্ট সময় মেনে ওষুধ ও পথ্য খাওয়া এবং ডাক্তার নির্দেশিত দিন পর্যন্ত ওষুধ খেতে বাধ্য থাকাকে ওষুধের সঠিক ব্যবহার বলে । যেমন, একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির (১৮ বছর বা অধিক) কোন ধরনের সংক্রমণ (Infection) হলে ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী এমপিসিলিন (৫০০ মি.গ্রা.) ৮ ঘন্টা অন্তর অন্তর দিনে ৩ বার করে ৭ দিন খেতে হবে। কোন রোগীর এ নিয়ম মেনে চলাকেই ওষুধের সঠিক ব্যবহার বলে । যদি কোন রোগী দিনে ৮ ঘন্টা অন্তর ওষুধটি না খান এবং নির্দেশিত সময় অর্থাৎ ৭ দিন পর্যন্ত গ্রহণ না করেন তবে এটাকে ওষুধের অপব্যবহার হিসাবে গণ্য করা হবে। রোগীর এ ধরনের ভুল প্রায়শ হয়ে থাকে। এই ভুলগুলো রোধ করা ফার্মাসিস্টের দায়িত্ব । ফার্মাসিস্টরা হচ্ছেন ওষুধ বিশেষজ্ঞ বা ড্রাগ এক্সপার্ট যিনি ওষুধের ব্যবহার সম্পর্কে ভাল জ্ঞান রাখেন। ওষুধের অপব্যবহারের কারণসমূহ নিম্নরুপ: (১) প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ ক্রয়/বিক্রয় করলে, যেমন এন্টিবায়োটিক জাতীয় সব ওষুধ, হার্টের ওষুধ ইত্যাদি; ওষুধ, কিডনি রোগের ওষুধ ইত্যাদি।  (২) প্রেসক্র

ওষুধ ব্যবহারের আগে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়

Image
কোন অসুস্থ ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন ওষুধের দোকানে গিয়ে নিজের ধারণা বা অনুমানমত ওষুধ কেনা কখনও উচিত নয়। যদি কেউ এ ধরনের অনুচিত কাজ করেন তাহলে এর শারীরিক ক্ষতি ও পরিণাম ভয়াবহ। এছাড়াও যে ফার্মাসিস্ট ওষুধের দোকানে কাজ করেন তারও উচিত নয় কোন রোগী/ব্যক্তি প্রেশক্রিপশন ছাড়া কোন ওষুধ যেমন হার্টের ওষুধ, এন্টিবায়োটিক ইত্যাদি ক্রয় করতে এলে সহযোগিতা করা। এগুলো ব্যবস্থাপত্র ছাড়া বিক্রয় করা থেকে বিরত থাকা ফার্মাসিস্টের দায়িত্ব ও কর্তব্য। বরং ফার্মাসিস্টের কাজ হলো রোগীকে বুঝিয়ে ডাক্তারের কাছে পাঠানো, কারণ একমাত্র ডাক্তার সাহেবই যেকোন রোগের কারণ বুঝতে পারেন এবং রোগের ধরন অনুযায়ী ওষুধ নির্ধারণ করতে পারেন। আইনগতভাবে ডাক্তাররা হচ্ছেন একমাত্র স্বীকৃত পেশাজীবী যারা রোগ নির্ণয় ও ওষুধের নাম, মাত্রা ও ব্যবহারের মেয়াদ নির্ধারণ করে থাকেন। অন্যদিকে ফার্মাসিস্টদের কাজ হচ্ছে কোন ব্যক্তি প্রেশক্রিপশন নিয়ে দোকানে উপস্থিত হলে মান সম্পন্ন ওষুধ, ওষুধ খাওয়ার নিয়মাবলি, ওষুধ সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে রোগীকে বিশদ ধারণা দিয়ে রোগীকে সাহায্য করা। উদাহরণস্বরূপ, জন্ডিসের সময় কেউ প্যারাসিটামল গ্রহণ করলে তা মারাত্মক

ওষুধের ব্যবহার/ অপব্যবহার

Image
ফার্মাসিস্টরা যখন ফার্মেসীতে কাজ করেন তখন তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যেকোনো প্রেসক্রিপশন বা ব্যবস্থাপত্র সরাসরি ফার্মেসীতে আসে ওষুধ ক্রয়ের জন্য। যে সকল ফার্মাসিস্টরা ওষুধের দোকানে কাজ করেন, তাদের সামাজিক দায়িত্ব অনেক। ওষুধের দোকানে ফার্মাসিস্টকে সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকতে হয়।  রোগী বা রোগীর কোন আত্মীয় ওষুধ কিনতে দোকানে এলে প্রথমে সাক্ষাত দেন ফার্মাসিস্ট। সাধারণত (রোগীর) ব্যবস্থাপত্র অনুসারে ফার্মাসিস্ট প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং পথ্য সর্ম্পকে রোগীকে ধারণা দিয়ে থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশে ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ কেনা বা বিক্রির প্রবণতা নিয়মিত ব্যাপার। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া প্রতিদিন শত শত এন্টিবায়োটিক যেমন সেফরাডিন, সেফিক্সিম, সেফুরক্সিম, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, লিভোফ্লক্সাসিন ইত্যাদি ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। এন্টিবায়োটিক বিক্রয়ের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র থাকা বাঞ্ছনীয়। অর্থাৎ ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অতএব কোন ফার্মাসিস্ট যদি রোগী চাহিবামাত্র অথবা রোগী কোন রোগের উপসর্গের কথা বলামাত্র এন্টিবায়োটিক দিয়ে দেন, তাহলে এটি শুধু ওষুধের অপব্যবহারই নয় বরং এটি

চিকিৎসার ধারা অনুযায়ী ওষুধের শ্রেণিবিভাগ (Classification of drugs according to the mode of treatment)

Image
সাধারণভাবে আমরা যে সব ওষুধ গ্রহণ করি তার বেশির ভাগই হচ্ছে বিভিন্ন রাসায়নিক। এছাড়া অন্যান্য ধরনের ওষুধ রয়েছে। এখানে চিকিৎসা ধারা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ওষুধের কথা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো। ১। এলোপ্যাথি (Allopathy) : বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে গাছগাছড়ার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ওষুধের মূল উপাদান দিয়ে চিকিৎসা করার জন্য এই পদ্ধতি। এটি বর্তমান সময়ের মূলধারার ওষুধ যা দ্রুত রোগ উপশম করে। এই জন্য চিকিৎসক রোগীদের কাছে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সাধারণত বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান দিয়ে এ ধরনের ওষুধ তৈরি করা হয়। এটি অত্যন্ত বিশুদ্ধ এবং সুনির্দিষ্ট রোগের ওপর কাজ করে বলে এর কার্যক্ষমতা বেশি। এলোপ্যাথি ওষুধের মূল অসুবিধা হল এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এই ধরনের ওষুধ ব্যবহার বিপজ্জনক। তাই রোগের লক্ষণ ভালভাবে বুঝে এরপর এই ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। ২। হোমিওপ্যাথি (Homeopathy):   অষ্টাদশ শতকে জার্মান চিকিৎসক ও রসায়নবিদ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথির ধারণা দেন। এই পদ্ধতিতে ওষুধ বিভিন্নমাত্রায় রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা হয়। ওষুধের যে মাত্রায় রোগীর সমলক্ষণ প্রকাশিত হয় সেই মাত

ইবনে সিনা (Ibn Sina)

Image
ইবনে সিনা ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে পারস্যে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ওষুধকে আধুনিক ও আকর্ষণীয় করার নিয়মের প্রবক্তা। তিনি তিতা ও বিস্বাদ ওষুধকে সুমিষ্ট, সুস্বাদু ও সুগন্ধময় করার উপায় হিসাবে সিরাপ আবিষ্কার করেন। বটিকাকে চিনির প্রলেপ দিয়ে 'সুগার কোটেড' করেন।  হাতের বদলে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বটিকা তৈরির জন্য কাঠের ছাঁচ তৈরি করেন, পরবর্তীতে যার অনুকরণে ট্যাবলেট মেশিন আবিষ্কৃত হয় । তিনি ইউনানি চিকিৎসা বিজ্ঞানকে এতটাই উন্নত করেন যে তাঁকে ইউনানি চিকিৎসা শাস্ত্রের প্রধান বিজ্ঞানী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ 'কানুন' সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে পাঠ্যবই হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এই বইটি থেকে প্রমাণিত হয় যে তিনি গ্রিক ও আরব বিজ্ঞানীবৃন্দ এবং ভারতের চরক ও শুশ্রুত দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এদের ভাল দিকগুলো গ্রহণ করেছিলেন। ইবনে সিনা অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন ফার্মাকোলজীতে তাঁর অসামান্য অবদানের কারণে। তিনিই প্রথম সংক্রামক রোগ এবং যৌন রোগের ধারণা দেন। তিনি রোগের শ্রেণিবিন্যাস করেন এবং স্বাস্থ্যবিধি প্রণয়ন করেন। স্বাস্থ্যবিধির আওতায় রোগ সংক্রমণকালে রোগীকে পৃথকভাবে রাখা

আল রাজী (Al Razi)

Image
অন্যান্য সভ্যতার তুলনায় আরব চিকিৎসকদের ইতিহাস অত্যন্ত নবীন। মাত্র প্রায় ১,০০০ বছর পূর্বে এই চিকিৎসকরা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে তাঁদের অসামান্য জ্ঞান-প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। এঁদের মধ্যে আল রাজী, ইবনে সিনা প্রমুখ ছিলেন অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। আল রাজী চিকিৎসার মূল ভিত্তি হিসাবে রসায়নকে গ্রহণ করেন।  তখন রসায়নকে বলা হতো 'আল-কেমি'। তিনি রসায়ন শাস্ত্রের বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক ছিলেন। তিনিই প্রথম চিকিৎসা ক্ষেত্রে গাছগাছড়ার বদলে মূল উপাদান বা পিওর কেমিক্যাল ব্যবহার শুরু করেন। ইউরোপের বিজ্ঞানীরা আল রাজীকে 'র‍্যাজেস' নামে ডাকে। তিনি ৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইরানে জন্মগ্রহণ করেন। পেশাগতভাবে তিনি ছিলেন ইরাকের বাগদাদে অবস্থিত বিখ্যাত মুক্তাদারি হাসপাতালের প্রধান। তিনিই প্রথম গুটি বসন্ত ও হামের চিকিৎসা শুরু করেন। ফুলের পরাগ রেণু থেকেও যে এলার্জি হতে পারে তা তিনিই প্রমাণ করেন। এছাড়া তিনিই প্রথম অনুধাবন করেন যে, শরীরে রোগ বিকাশের সাধারণ প্রথম ধাপ হলো জ্বর। 'কিতাব আল মনসুরি', ‘আল-হাউয়ি’,‘মানলা ইয়াহ্দু আল-তাবীব' ইত্যাদি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ।

গ্যালেন (Galen)

Image
রোমের আরেকজন অত্যন্ত বিখ্যাত চিকিৎসক গ্যালেন ১৩০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। অনেক ঐতিহাসিকের মতে তিনি ছিলেন প্রথম ফার্মাসিস্ট, কারণ তিনি চিকিৎসার পাশাপাশি ওষুধসামগ্রী প্রস্তুত ও বিক্রি করতেন। তিনি মলমকে উন্নত করেন, ইমালশান আবিস্কার করেন এবং পরবর্তীতে এখান থেকে সর্বপ্রথম কোল্ড ক্রীম তৈরি করেন।  তাঁর লেখা, চিন্তাধারা ও চিকিৎসা পদ্ধতি প্রায় দুই হাজার বছর ধরে চিকিৎসা শাস্ত্রকে প্রভাবিত করছে। তিনি ছিলেন হিপোক্রেটিসের চিন্তাধারার সমর্থক। তিনি বিশেষ করে শারীরবিদ্যার বিভিন্ন অজানা দিক উন্মোচন করেন। সে সময় রোমে শব ব্যবচ্ছেদ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু গ্যালেন থেমে যাননি। তিনি বানর ও শুকরের দেহ ব্যবচ্ছেদ করেন এবং ধারণা করেন যে এদের সাথে মানবদেহের অনেক মিল রয়েছে। গ্যালেন স্নায়ুতন্ত্রের উপর বহু পরীক্ষা করে তত্ত্ব প্রদান করেন যে, 'মস্তিষ্ক সব মাংসপেশীর কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করে।

ডিওসকোরাইডিস

Image
ডিওসকোরাইডিস ৩০ খ্রিস্টাব্দে তুরস্কে জন্মগ্রহণ করলেও পরবর্তীতে রোমে চলে যান এবং কালক্রমে সেখানে বিখ্যাত সম্রাট নিরোর প্রধান চিকিৎসক নিযুক্ত হন।  সম্রাট ও সেনাবাহিনীর সাথে তিনি বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রের চাইতে সেই সব দেশের চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে তথ্য বিনিময়ে তিনি বেশি আগ্রহী ছিলেন। এভাবে তিনি বিভিন্ন দেশের সহস্রাধিক গাছগাছড়ার ছবি একে এগুলোর ওষুধি গুণাগুণের কথা লিপিবদ্ধ করে 'দ্য মেটেরিয়া মেডিকা' নামে বই লিখে গেছেন। পরবর্তীকালে তাঁর এই গ্রন্থ ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও ভারতে অনেকগুলো ভাষায় অনুবাদ করা হয়। তাঁর মৃত্যুর দেড় হাজার বছর পরেও এই বইটি মেডিকেল ছাত্রদের পাঠ্য ছিল।

হিপোক্রেটিস্ (Hippocrates)

Image
ওষুধ বিজ্ঞানের ইতিহাসে ইউরোপের বিশেষ করে গ্রিস ও রোমের চিকিৎসকদের অবদান সুবিদিত। তাঁদের মধ্যে হিপোক্রেটিস্, ডিওসকোরাইডিস্, গ্যালেন প্রমুখ অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। হিপোক্রেটিস এতোই বিখ্যাত যে তাঁকে ইউরোপ মহাদেশের বিজ্ঞানীরা ‘ফাদার অব্ মেডিসিন' নামে অভিহিত করেন।  তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৪২৫ সালে গ্রিসে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর লিখিত বইয়ের নাম 'ম্যাটেরিয়া মেডিকা' যা তাঁর মৃত্যুর বহু বছর পর পর্যন্ত মেডিক্যাল কলেজগুলোতে পড়ানো হতো। বইটিতে অসংখ্য গাছগাছড়াজাত ওষুধ, সেগুলো তৈরির প্রক্রিয়া, সেবনবিধি ও মাত্রা ইত্যাদি রয়েছে। তিনি চিকিৎসকদের নৈতিকতার ওপর খুব জোর দিতেন। যে কারণে নবীন চিকিৎসকদের পেশায় প্রবেশকালে নৈতিকতার শপথ নেয়ার জন্য ‘হিপোক্রেটিক ওথ' রচনা করেন, যা আজো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনুসরণ করা হয়।

শুশ্রুত

Image
একইভাবে খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৬০০ সালে শুশ্রুত তাঁর 'শুশ্রুত সংহিতা' বইতে ৭৬০ ধরনের ওষুধকে তাদের সাধারণ গুণ অনুযায়ী ৭টি গোষ্ঠীতে ভাগ করেন ।  প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতায় চিকিৎসার পাশাপাশি তিনিই প্রথম অস্ত্রোপচার প্রবর্তন করেন। ভারতীয় সভ্যতায় তিনি অস্ত্রোপচার বা শল্যচিকিৎসায় অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। তিনি অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত ১২০টি বিভিন্ন যন্ত্রপাতির নকশা লিপিবদ্ধ করেন যা আজও অনুসরণ করা হয়। তিনি ছিলেন বেনারসের অধিবাসী, গঙ্গা নদীর তীরে ছিল তাঁর হাসপাতাল। চরক এবং শুশ্রুত যে কাজ করে গেছেন সেগুলোই আজকের আয়ুর্বেদীয় শাস্ত্রের ভিত্তি। ভারতীয় জনগণের একটি বড় অংশ এখনও আয়ুর্বেদীয় শাস্ত্রমতে চিকিৎসা গ্রহণ করে।

চরক (Charak)

Image
ভারতীয় সভ্যতার চিকিৎসকেরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ভেষজ লতা-পাতাকে তাদের ওষুধি গুণ অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করেন। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৮০০ সালে চরক তাঁর লিখিত 'চরক সংহিতা' বইতে এরকম ৫০টি শ্রেণি তৈরি করেন যার প্রতিটিতে ছিল ১০টি করে ওষুধ।  তাঁর মতে এই ৫০০ ধরনের ওষুধ ছিল একজন চিকিৎসকের মূল হাতিয়ার। চরক ছিলেন কাশীর মহারাজার রাজবৈদ্য। তিনি তাঁর ওষুধগুলোকে 'আসব', 'অরিস্ট', 'বটিকা', চূর্ণ', 'তৈল' ইত্যাদি উপস্থাপনায় বা ডোজেস ফর্মে তৈরি করতেন। তাঁর চিন্তাধারা ও চিকিৎসা পদ্ধতির হাত ধরেই আজকের আয়ুর্বেদীয় শাস্ত্রের প্রতিষ্ঠা। তাঁর 'চরক সংহিতা' বইটিই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের প্রথম বই। তিনি শারীরবিদ্যা, রোগতত্ত্ব এবং ভ্রূণবিদ্যার সুপণ্ডিত ছিলেন। তিনি ওষুধের উৎসগুলোকে উদ্ভিজ, প্রাণীজ ও খনিজ -- এই তিনভাগে বিভক্ত করেন। তাঁর বই থেকে আমরা আজ থেকে প্রায় ২,৮০০ বছর আগে ভারতীয় উপমহাদেশে কী ধরনের অসুখ হতো, সেগুলোর চিকিৎসায় কী ওষুধ ব্যবহার হতো, কীভাবে সেগুলো তৈরি হতো, কোন মাত্রায় ব্যবহার হতো, এমনকি রোগীর পথ্য কী হবে এসব বিষয়ে জানতে পারি। ইউরোপের বিজ্

শেন নাং (Shennong)

Image
চীনারা খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫,০০০ বছর আগে থেকে ভেষজ ওষুধ ব্যবহার করত। খ্রিস্টপূর্ব ২,০০০ সালে চীনের সম্রাট শেন নাং রচনা করেন ‘পেটি-সাও' (Pen-ti-Sao) নামের এক ভেষজ গ্রন্থ। এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে পুরনো চৈনিক ওষুধ বিষয়ক বই। তিনি চীনের সম্রাট হলেও সাধারণ মানুষের মত জীবনযাপন করতেন।  এমনকি নতুন ওষুধ নিজের শরীরেও প্রয়োগ করতেন । তাঁর গাছপালার প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল। সেই সময় একবার চীনে শিকারের অভাবে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে শেন নাং তাঁর জনগণকে চাষাবাদে উৎসাহিত করেন। এসময় তিনি তাদেরকে হাতে-কলমে শিক্ষা দান করেন। তাঁর এই অবদানের জন্য তাঁকে চীনের কৃষির জনক বলা হয়। কথিত আছে যে, শেন নাং প্রথম চা আবিষ্কার করেন। তিনি চা প্রস্তুত প্রণালী এবং এর ওষুধি গুণ সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করেন। তিনি চিকিৎসা কাজে ব্যবহৃত উদ্ভিদের শ্রেণি বিন্যাস ও মানদণ্ড তৈরি করেন।